সেজদা একমাত্র আল্লাহর জন্য

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে আমরা আল্লাহ তায়ালাকে সেজদা করি। কেননা তিনি আমাদের স্রষ্টা। আর তাঁর ইবাদতের জন্যই আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। কেবল তিনিই ইবাদতের উপযুক্ত। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করা সম্পূর্ণ হারাম। সেটা কারো সম্মান, মর্যাদা আর যে অর্থেই হোক না কেন। কিন্তু আজ দেখা যায়, বিভিন্ন অজুহাতে মানুষ
মানুষকে সেজদা করছে। পীরকে মুরিদরা সেজদা করছে। পায়ে পড়ে চুমু খাচ্ছে, যা ইসলাম  আদৌ সমর্থন করে না।  হজরত ইউসুফ আ:-কে তাঁর ভাই ও বাবা-মা মিসরে
পৌঁছার পর সেজদা করেছিলেন বলে উল্লেখ আছে। এটা সুস্পষ্ট যে, এ সেজদা ইবাদতের উদ্দেশ্যে হতে পারে না। কেননা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কারো উপাসনা করা শিরক ও কুফরি। কোনো শরিয়তেই এমন কাজের বৈধতা থাকতে পারে না। সুতরাং তাদের সেজদার অর্থ এই দাঁড়াবে যে, প্রাচীনকালের সেজদা, আর আমাদের কালের সালাম, মুসাফাহা, মুআনাকা এবং সম্মান প্রদর্শনার্থে দাঁড়িয়ে যাওয়া সমার্থক বা সমতুল্য।

ইমাম জাসসাস র: আহকামুল কুরআন গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, পূর্ববর্তী নবীগণের শরিয়তে বড়দের প্রতি সম্মানসূচক সেজদা করা বৈধ

ছিল। শরিয়তে মুহাম্মাদিতে তা রহিত হয়ে গেছে। বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পদ্ধতি হিসেবে এখন শুধু সালাম ও মুসাফাহার অনুমতি রয়েছে। রুকু-সেজদা এবং নামাজের মতো করে হাত বেঁধে দাঁড়ানোকে সম্পূর্ণ হারাম করা হয়েছে। 
মূলত যা শিরক, কুফর, তা ইবাদতের উদ্দেশে কোনোকালে কোনো শরিয়তেই বৈধ ছিল না। কিন্তু আমাদের স্বল্পজ্ঞান অজ্ঞানতার দরুন আমরা নানাবিধ কুফর, শিরক ও বিদয়াতের মতো জঘন্য শরিয়ত বিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়ছি।

আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রিয় নবী সা:-এর আনীত ইসলামী শরিয়ত অবিনশ্বর ও চিরন্তন শরিয়ত। রাসূলে করিম সা:-এর মাধ্যমে যেহেতু নবুওয়াত ও রিসালাতের পরিসমাপ্তি ঘটেছে এবং তার শরিয়তই যেহেতু সর্বশেষ শরিয়ত, সেহেতু একে বিকৃতি ও মূলচ্যুতি থেকে বাঁচানোর জন্য এমন প্রতিটি ছিদ্রপথই বìধ করে দেয়া হয়েছে, যাতে শিরক ও পৌত্তলিকতা প্রবেশ করতে না পারে। কোনো কোনো আলেম বলেছেন, ইবাদতের মূল যে নামাজ, তাতে চার রকমের কাজ রয়েছে। যথা­ দাঁড়ানো, বসা, রুকু ও সেজদা করা। তন্মধ্যে প্রথম দু’টি মানুষ অভ্যাসগতভাবে নিজস্ব প্রয়োজনেও করে। এবং নামাজে তা ইবাদত হিসেবেও করে। কিন্তু বাকি দু’টি কাজ এমন, যা ইবাদত ছাড়া কেউ করে না। আর এ দু’টি কাজ এত মর্যাদাশীল যা আল্লাহকে স্রষ্টা হিসেবে মেনে নেয়ার এক প্রকার স্বীকৃতি। গোলাম হিসেবে মহান প্রভুর কাছে নিজেকে সমর্পণ করা বোঝায় এই রুকু, সেজদার মাধ্যমে। তাই এটা শুধু ইবাদত হিসেবেই গণ্য হবে, অন্য কোনো অর্থে নয়। সুতরাং আল্লাহ ছাড়া কাউকে সেজদা করা হারাম। রাসূল সা: বলেছেন, যদি আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো মানুষকে সেজদা করার অনুমতি দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে বলতাম সে যেন তার স্বামীকে সেজদা করে।


এই হাদিসটি আবু হুরায়রা, ইবনে আব্বাস রা:সহ ২০ জন সাহাবি

থেকে বর্ণিত। কিন্তু এই শরিয়তে সেজদায়ে তাজিম সম্পূর্ণ হারাম বলে কাউকে সেজদা করা কারো পক্ষে জায়েজ নেই। কিন্তু আজ আমাদের সমাজে এমন কিছু ভণ্ড পীরের আবির্ভাব ঘটেছে, যারা নামাজ, রোজা, পর্দার বিধানকে ছেড়ে দিয়ে মুরিদদের হাদিয়ার নামে টাকা-পয়সা এবং সম্মানের নামে সেজদা পর্যন্ত করাচ্ছে। আর সরলমনা এই মানুষেরা পীরের সুন্দর সুর আর চটকদার কথা শুনে নিজেদের ঈমান, আকিদাকে ধ্বংস করছে।

তারা এমন এক মোহে পড়েছে, যেখান থেকে তাদের তুলে আনা দু:সাধ্য। কিন্তু এই মহামারী থেকে মুসলিম উন্মাহকে রক্ষা করা আজ সবার ঈমানি দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে, রাসূল সা:-এর দেখানো সত্য-সুন্দর তথা সিরাতে মুস্তাকিমের পথ ব্যতীত কোনো পথেই মুক্তি নেই।



মাওলানা আশরাফ মাহমুদ

লেখক : শিক্ষক, প্রবন্ধকার
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত (১৭.০৬.২০১১)

ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড : ইসলামী দিগন্ত  (ইসলামী দিগন্ত-১৫)
বিষয়শ্রেণী: ধর্ম-চিন্তা