ইসলামে মাতা - পিতার প্রতি কর্তব্য

 শিশু কিশোর বন্ধুরা, তোমরা কি জানো- আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পর এ পৃথিবীতে আমাদেরকে কারা সবচেয়ে বেশী ভালোবাসেন ? তোমরা হয়তো দু'চোখ বন্ধ করে এক মুহূর্তেই বলে দিচ্ছো- কারা আবার! বাবা-মাই তো আমাদেরকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসেন। হ্যাঁ বন্ধুরা, তোমরা ঠিকই বলেছো। কারণ
জন্মের পর থেকেই প্রতিটি বাবা-মা নিজেদের আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে সন্তানের সুখ ও নিরাপত্তার জন্য যতটা পেরেশান হয়ে পড়েন অন্য কেউই এমনটি করেন না। সন্তান যেন আদর্শ মানুষ হয় এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয় সেজন্য বাবা-মা শৈশব থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করেন। আর এজন্যই পৃথিবীর সব ধর্মই বাবা-মাকে বিশেষ সম্মান দিয়েছে।

পবিত্র কোরআনের অন্ততঃ পনের জায়গায় পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে। সুরা লোকমানের ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, "আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি কেননা তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। আমি আরো নির্দেশ দিয়েছি আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। অন্যদিকে সূরা বনি ইসরাইলের ২৩ ও ২৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ' শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিওনা। তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণভাবে কথা বলো।'
অন্যদিকে রাসূলে খোদা মায়ের মর্যাদা দিতে গিয়ে বলেছেন, জান্নাত মায়ের পদতলে। পিতার মর্যাদা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, পিতার সন্তুষ্টির ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টির ওপর আল্লাহর অসন্তুষ্টি নির্ভর করে। পিতামাতার সাথে অসৎ আচরণের পরিণাম সম্পর্কে তিনি বলেছেন, সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ কী তা কি আমি তোমাদের জানাব ? তা হচ্ছে- আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা ও পিতা-মাতার সঙ্গে অসদাচরণ। এ প্রসঙ্গে আমিরুল মোমেনীন হযরত আলী (আঃ) বলেছেন, পিতামাতাকে অসম্মান করা বড় ধরণের পাপ।
বন্ধুরা, পিতামাতা দুজনই সন্তানের কাছে মর্যাদাবান হলেও ইসলামে মায়ের মর্যাদা পিতার চেয়েও বেশী দেওয়া হয়েছে। কারণ সন্তানকে লালনপালন করার ক্ষেত্রে মা-ই বেশী ভূমিকা পালন করে থাকেন।
বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জানো, আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর জন্মের আগেই বাবা এবং মাত্র ছয় বছর বয়সেই মাকে হারান। বাবার স্নেহ ও মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হলেও নবীজি তাঁর দুধমা হালিমাকে মায়ের মতোই ভালোবাসতেন। এ সম্পর্কে এখন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বলছি ।
‘রাসূল (সাঃ) একদিন তাঁর সাহাবীদের সাথে আলাপ করছিলেন। এমন সময় এক বৃদ্ধা সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। নবীজি বৃদ্ধাকে দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এবং তাঁর গায়ের চাদরটি মাটিয়ে বিছিয়ে তাকে বসতে দিলেন। তারপর অত্যন্ত দরদ দিয়ে বৃদ্ধার সাথে কথাবার্তা বললেন। বৃদ্ধা চলে গেলে সাহাবীরা বিষ্মিত হয়ে নবীজিকে জিজ্ঞেস করলেন,‘ কে এই মহিলা যার জন্য আপনার এতো দরদ, এতো আন্তরিকতা?' নবীজি উত্তরে বললেন, তিনি আমার দুধমাতা হালিমা। তিনি আরো জানালেন যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পরেই মায়ের স্থান এবং মায়ের পায়ের নিচেই সন্তানের বেহেশত। '
কেবল রাসূল (সাঃ)-ই নন, যুগে যুগে অসংখ্য মানুষ মাতৃভক্তির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তোমরা নিশ্চয়ই ইরানের বিখ্যাত সাধক হযরত বায়েজীদ বোস্তামীর নাম শুনেছো। ইরানের মাজানদারান প্রদেশের বোস্তাম নগরে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। কবি কালিদাস রায় তার ‘মাতৃভক্তি' কবিতায় বায়েজিদ বোস্তামীর মাতৃভক্তির এক বিষ্ময়কর কাহিনী তুলে ধরেছেন। এই কবিতায় আমরা দেখতে পাই- একদিন হযরত বায়েজিদ বোস্তামীর মা হঠাৎ করে রাতে ঘুম থেকে জেগে পানি খেতে চাইলেন। বালক বায়েজিদ দেখলেন, ঘরের কলসিতে পানি নেই। তখনি তিনি ছুটলেন বহু দুরের ঝর্ণা হতে পানি আনতে। পানি নিয়ে এসে দেখলেন, মা এরই মধ্যে ঘুমিয়ে গেছেন। মায়ের ঘুম ভাঙানো অপরাধ হবে ভেবে তিনি সারারাত পানির গ্লাস হাতে মায়ের শিয়রে দাঁড়িয়ে রইলেন। আর প্রতিক্ষা করতে লাগলেন- কখন মায়ের ঘুম ভাঙবে? এক সময় রাত কেটে গেল। ফজরের আযান হলো। মা জেগে দেখলেন, বায়েজিদ দাঁড়িয়ে আছেন। মায়ের প্রতি ভক্তি দেখে আনন্দে মা কেঁদে ফেললেন। কবি কালিদাসের ভাষায়-কহিল মা, মরি মরি!বাছারে আমার পানি হাতে করে সারা রাত্রটি ধরিদাঁড়াইয়া আছো? ঘুমাওনি আজ? চোখে এলো জল ভরি।
এ ঘটনার পর কান্না ভেজা চোখে মা সেদিন বায়েজিদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আর মায়ের দোয়ার বরকতে হযরত বায়েজিদ বড় হয়ে বিশ্ব বিখ্যাত আউলিয়াদের একজন হয়ে গেলেন।
এতো গেল মানুষের কথা। তোমরা কি জানো-সন্তানের প্রতি মা মাকড়সার আত্মত্যাগের কাহিনী ? মা মাকড়সার ডিম ফুটে যখন বাচ্চা বের হয় তখন তারা ক্ষুধার জ্বালায় মা-মাকড়সার শরীর ঠুকরে ঠুকরে খেতে থাকে। এভাবে খেতে খেতে এক সময় মায়ের পুরো শরীরটাই তারা খেয়ে ফেলে। সকল যন্ত্রণা মা নীরবে সহ্য করে। এভাবে নিজের জীবন দিয়ে তারা সন্তানের জীবন বাঁচায়।বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছে, বাংলা সাহিত্যের একটি বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে মায়ের উপস্থিতি। এমন কোন কবি হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি মাকে নিয়ে কবিতা লিখেন নি। বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম লিখেছেন-যেখানেতে দেখি যাহামায়ের মতন আহাএকটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,মায়ের যতন এতআদর সোহাগ সে তোআর কোনখানে কেহ পাইবে না ভাই।
অন্যদিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-



মা বুঝি গান গাইতো আমারদোলনা ঠেলে ঠেলেমা গিয়েছে, যেতে যেতেগানটি গেছে ফেলে।
আমাদের সবার উচিত মা-বাবাকে সম্মান করা এবং যাদের মা নেই তাদের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। পরিশেষে কবির ভাষায় বলতে চাই-
মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাইইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভূবনে নাই।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সুন্দর নামগুলোর মধ্যে দুটি নাম হলো-‘আর-রহমান’ ও ‘আর-রহীম’। এর অর্থ হলো-পরম দয়াময় ও অতি দয়ালু। আল্লাহ তায়ালার রহমত দ্বারা পরিবেষ্টিত আমরা মানুষ। তার অশেষ রহমত ও করুণা আমাদের গোটা অস্তিত্বে ছেয়ে আছে। আর আল্লাহর এ রহমতকে প্রতিরোধ করার কেউ নেই। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর রহমত রুদ্ধ হয়ে গেলে তা বিমুক্ত করারও কেউ নেই। একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই সব রহমত ও করুণার অধিপতি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন ,আল্লাহ মানুষের জন্য যে রহমত উন্মুক্ত করে দেন, তা আটকে রাখার কেউ নেই। আর তিনি যা আটকে রাখেন, তারপর তা ছাড়াবার কেউ নেই। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় [সূরা আল ফাতির : ২। ইমাম শানকীতি রহ. বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ আয়াতে রহমত বলতে তার ব্যাপক ও বিশাল রহমত বুঝিয়েছেন, যা দুনিয়া ও আখিরাতকে অন্তর্ভুক্ত করে আর দুনিয়ার সকল সৃষ্টিকে শামিল করে’।
সব মানুষের প্রতি, সব প্রাণীর প্রতি দয়া-মায়া ও মমতা-করুণা করার জন্য ইসলামের নবি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। সৃষ্টির প্রতি রহম বা দয়া করলে স্রষ্টার দয়া-করুণা-রহমত লাভ করা যায়। আবদুল্লাহ ইবনে আমর [রা.] থেকে বর্ণিত রাসুল [সা.] বলেছেন, ‘দয়াকারীদের প্রতি মহান দয়াময় আল্লাহ রহম ও দয়া করেন। দুনিয়াতে যারা আছে; তাদের প্রতি তোমরা দয়া করো, তাহলে আসমানে যিনি আছেন; তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। [আবু দাউদ ও তিরমিজি]। ইমাম আহমাদ ও তাবারানি [রহ.] বর্ণিত বিশুদ্ধ সনদে ও নির্ভরযোগ্য সুত্রে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা মিম্বরে দাঁড়ানো অবস্থায় বলেন, তোমরা দয়া করো, দয়া পাবে। ক্ষমা করো, ক্ষমা পাবে’(আহমদ)।
জারির ইবনে আবদুল্লাহ [রা.] থেকে বর্ণিত রাসুল [সা.] বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি রহম করে না আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি রহম করেন না। [মুসলিম]। পরম দয়াময় অতি দয়ালু আল্লাহর বান্দা আমরা। তিনি চান আমরা যেন একে অন্যের প্রতি রহম করি। সব সৃষ্টির প্রতি দয়া-মায়া-করুণা-অনুকম্পা প্রদর্শন করি। ইমাম আহমাদ [রা.] থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসেছে, রাসুল [সা.] একবার মিম্বরে দাঁড়ানো অবস্থায় বললেন, ‘তোমরা দয়া করো, দয়া পাবে। ক্ষমা করো, ক্ষমা পাবে।’ [আহমদ]। শুধু রাসুল [সা.]-এর কথাই নয়। আল্লাহ তায়ালা রাসুলের সাহাবিদের পরস্পরে রহম বা দয়া চর্চাকারী বলে প্রশংসা করেছেন। পবিত্র কোরানে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল এবং তার সঙ্গে যারা আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়।’ [সূরা আল ফাতহ : ২৯]।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন উত্তম আকৃতিতে। তিনি তাকে অন্যান্য বহু সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে ,নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি উত্তম গঠনে [সূরা আত তীন :৪। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, আর আমি তো আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং আমি তাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে বাহন দিয়েছি এবং তাদেরকে দিয়েছি উত্তম রিজক। আর আমি যা সৃষ্টি করেছি তাদের থেকে অনেকের ওপর আমি তাদেরকে অনেক মর্যাদা দিয়েছি [সূরা আল ইসরা : ৭০। মানুষ ছাড়া পৃথিবীতে আর যা কিছু আছে সবই মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, তিনিই পৃথিবীতে যা আছে সব তোমাদের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন [সূরা আল বাকারা : ২৯। কাজেই গোটা পৃথিবীটাই তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য রহমত-দয়া-করুণা ও অনুগ্রহ হিসেবে। অন্যকে ক্ষমা করা, দয়া-মায়া ও মমতা-করুণা ছিল নবিজি [সা.] এর সহজাত স্বভাব। তিনি নিজে এই কাজে এগিয়ে ছিলেন এবং সাহাব আজমাইনসহ গোটা উম্মতকে দয়া-মায়া ও মমতা-করুণার আমলে অগ্রগণ্য থাকার জন্য উপদেশ প্রদান করেছেন।
 

সন্তান-মায়ের নাড়িকাটা ধন। রক্তের বাঁধন, অতি আপনজন। এই পৃথিবীতে মায়ের চেয়ে বড় আপনজন আর কেউ নেই। মা-সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন। দশমাস দশদিন পেটে রাখেন। গর্ভে থাকাকালীন অবস্থায় সন্তান মায়ের দেহ থেকে নাভি দিয়ে খাদ্য গ্রহণ করে। মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হবার সময় প্রসবকালীন কি যন্ত্রণা মাকে সহ্য করতে হয় তা ভূক্তভোগী ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারবেনা। জন্মের পর সন্তানের লালন পালনের দায়িত্ব মাকেই পালন করতে হয়। তখন মায়ের দুধই হয় শিশুদের প্রধান খাদ্য। পবিত্র কুরআনে দুই বছর পর্যন্ত শিশুদের দুগ্ধদানের জন্য আল্লাহ সকল মাকে নির্দেশ দিয়েছেন। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠজীব মানুষ জন্মের পর বড়ই অসহায় থাকে। এক অসহায়ত্বের মেয়াদ হবে বেশ কয়েক বছর। এহেন অসহায় অবস্থায় প্রধান সাহায্যকারী থাকে মা। মা-অতি আদর যত্নে শিশুকে লালন-পালন করেন। সব সময় তার পরিচর্যা করেন। অসুখ-বিসুখে বিনিদ্র রজনী যাপন করে সেবা শুশ্রুষা করেন। কণকণে শীতের রাতে পর্ণকুটিরে কুপি জালিয়ে অসুস্থ শিশুকে পাহাড়া দেন। মমতার চাদর দিয়ে রৌদ্রের প্রখর উত্তাপ থেকে রক্ষা করেন।
মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হবার পর প্রতিটি শিশু ‘মা-মা’ বলে কান্না করে। এই কান্নার বিশেষ মমার্থ রয়েছে। দৈবভাবেই প্রতিটি শিশু হয়ত জানে না, এই পৃথিবীতে মা-ই তার প্রথম ও শেষ আশ্রয়স্থল। শিশুর মুখে যখন বোল ফোটে তখন সে প্রথমে মাকেই ডাকে। মা যেই ভাষায় কথা বলেন, সন্তানও সেই ভাষায় কথা বলতে শিখে। তাইতো প্রতিটি জাতি তাঁদের মুখের ভাষাকে মাতৃভাষা বলে অভিহিত করেন। আর মাতৃভাষা প্রতিটি দেশের জাতীয় সম্পদ। মাতৃভাষার মাধ্যমেই একটি জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও স্বকীয় স্বত্ত্বা গড়ে ওঠে। জাতি হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত গর্বিত যে, এদেশের সন্তানেরা তাঁদের মায়ের ভাষা রক্ষা এবং মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য জীবন বিসর্জন দিয়ে এক সোনালী ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন যা বিশ্ব পরিমন্ডলে বিরল। ভাষা শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের এই আত্মত্যাগ জাতি যুগ যুগ ধরে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। আর বাংলাদেশী মায়েরা তাঁদের শহীদ সন্তানদের জন্য বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে সবসময় দাঁড়াতে পারবেন।
মা-সন্তান জন্মদান করলেও পিতার ঔরসেই সেই সন্তান তাঁর গর্ভে আসে। একমাত্র ব্যতিক্রম ছাড়া সৃষ্টির আদি থেকেই এই প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। ব্যতিক্রমটি হলো হযরত ঈসা (আঃ)-এর কোন পিতা নেই। আল্লাহ্র হুকুমে বিবি মরিয়ম এর গর্ভে তাঁর আবির্ভাব ঘটে। ইসলাম ধর্ম হতে মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)। তাঁর স্ত্রী-মা হাওয়া (আঃ)। আদম-হাওয়ার মিলনের ফসল হলো আজকের এই মানব বাগান। হযরত ঈসা (আঃ) কে পিতা বিহীন সৃষ্টি করে আল্লাহ্ পাক হয়ত মানব জাতিকে তাঁর সৃষ্টি বৈচিত্র বা রহস্য দেখাতে চেয়েছেন। কিন্তু খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীগণ হযরত ঈসা (আঃ) কে যিশু নামে অভিহিত করে তাঁকে ঈশ্বরের সন্তান বলে মনে করে থাকেন- যার কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। সৃষ্টি রহস্য যাই হোক না কেন সন্তান লালন-পালন ও পরিবারের ভরণপোষণে পিতার ভূমিকা অপরিসীম। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে পিতা পরিবারের ভরণপোষণ বহন করেন। সন্তানদের অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদনসহ যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করেন। যেই সন্তানের পিতা নেই তাকে এতিম বলা হয়। পিতার গুরুত্ব যে কত বেশী তা এতিম সন্তানগণ মর্মে মর্মে অনুভব করে। পরিবারকে একটি ঘর হিসেবে কল্পনা করলে পিতা হলেন সেই ঘরের মূল কাঠামো। জীবন ধারণের সকল উপকরণের যোগানদাতা।
পিতা-মাতা যৌথভাবে সন্তানকে লালন পালন ও মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সন্তান বড় হবার পর ওদের দেখভাল করার দায়িত্ব তার উপর বর্তায়। বৃদ্ধ বয়সে পিতা-মাতা জীবন নির্বাহের জন্য বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সন্তানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। তাঁদের সাথে সদাচরণ করা, আজীবন ভরণপোষণ দেয়া, রোগ-শোকে সেবা করা প্রত্যেক সন্তানের একান্ত কর্তব্য। সন্তানের সদাচরণ পাওয়া পিতা-মাতার অধিকার। এই ব্যাপারে সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পৃথিবীতে প্রচলিত সকল ধর্মে পিতা-মাতাকে ভক্তিশ্রদ্ধা করতে উপদেশ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মের অবস্থান অতি কঠোর। পবিত্র কুরআন-এ আল্লাহ্পাক বলেছেন- ‘‘আমি মানুষকে পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী সন্তানকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করে, তাকে স্তন্যপান ছাড়তে দু’বছর সময় লাগে। তাই আমার ও পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।’’
 (সূরা লোকমান- ১৪)
এই সূরায় আল্লাহ্পাক তাঁর পরই পিতা-মাতার স্থান নির্ধারণ করেছেন। সন্তান যাতে পিতা-মাতার অবাধ্য না হয় এবং সবসময় তাঁদের সম্মান করে সেজন্য পবিত্র কুরআনে বার বার তাগাদা দেয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে আল্লাহ্পাক পুনরায় বলেছেন, ‘‘তোমার রব, তিনি ছাড়া অন্য কারো উপাসনা না করতে এবং পিতা-মাতার প্রতি সদব্যবহার করতে আদেশ দিয়েছেন। তাদের একজন বা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলেও তাদেরকে বিরক্তিসূচক কিছু বলোনা, তাদের ভৎর্সনা করোনা এবং তাদের সাথে সম্মান সূচক নম্র কথা বলবে।’’
(সূরা বনী ইসরাঈল- ২৩)।
হিন্দু ধর্মেও পিতা-মাতাকে সম্মান করা এবং তাঁদের ভরণপোষণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মহামান্য মনুর মতে ‘‘শত অপরাধে অপরাধী হলেও বৃদ্ধ পিতা-মাতা, সতী স্ত্রী এবং শিশুর ভরণপোষণকে কখনো অগ্রাহ্য করা উচিত নহে।’’
হিন্দু আইন মতে, ‘‘একজন হিন্দু কোন সম্পত্তির মালিক হোক বা না হোক তার স্ত্রী, নাবালক পুত্র, অবিবাহিতা কন্যা এবং বৃদ্ধ পিতা-মাতার ভরণপোষণ দিতে আইনগতভাবে বাধ্য।’’
পিতা-মাতাকে সম্মান করা এবং তাঁদের ভরণপোষণ দেয়া ইবাদতের অংশ। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘‘হালাল উপার্জন দিয়ে পরিবারের জন্য যেই ব্যয় নির্বাহ কর হয় তা আল্লাহ্র নিকট সদকা হিসেবে বিবেচিত হয়।’’
তাছাড়া সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া আল্লাহ্ সর্বাগ্রে কবুল করেন। পবিত্র হাদিস মতে তিন শ্রেণীর মানুষের দোয়া আল্লাহ্ সরাসরি কবুল করে থাকেন। তাঁরা হলেন মজলুম, মুসাফির এবং পিতা-মাতা। যে সন্তান পিতা-মাতার সেবা করে তার ইহকাল ও পরকালীন জীবন ধন্য হয়। এটা অত্যন্ত সুখের বিষয় যে, আমাদের দেশের সন্তানেরা তাদের পিতা মাতাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করেন এবং পরিবারের ভরণপোষণের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন। সমাজে হাজার হাজার যুবক আছে যারা পিতা-মাতা সংসারের ভরণপোষণের জন্য বছরের পর বছর বিদেশে পরবাসে থাকে। পিতা-মাতা এবং ভাইবোনদের ভরণপোষণের জন্য তাদের অনেকে সঠিক সময়ে বিয়ে পর্যন্ত করতে পারেনা।
মোটর চালক এক যুবকের সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম, তার পিতা-মৃত্যুর সময় স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান রেখে গেছেন। পিতৃপরিবারের ঐ সকল সদস্যদের ভরণপোষণের দায়িত্ব এখন বড় সন্তান হিসেবে তার উপর বর্তিয়েছে। বিয়ে করেছে কিনা জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে সে বলল, ‘‘স্যার- আমার পরিবারে মা ও ভাই বোনসহ ছয়জন সদস্য রয়েছে। তাদের ভরণপোষণের জন্য আমাকে রাতদিন পরিশ্রম করতে হয়। উপার্জিত টাকা দিয়ে সংসার চালাতে ভীষণ কষ্ট হয়। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিয়ের কথা ভাবতে পারছিনা।’’
তার এ কথাগুলিকে আমাদের গ্রামীণ সমাজের হাজার হাজার যুবকের কথার প্রতিধ্বনি বলেই মনে হলো। আমাদের সমাজে পারিবারিক বন্ধন এতই দৃঢ় যে, পরিবারের যে কোন সদস্য অন্যান্যদের জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করেনা। এদেরকে সুসন্তান বলা হয়। আর সুসন্তানগণ হলো পিতা-মাতা ও দেশের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।
আমরা জানি মানুষ মরণশীল। এই পৃথিবীতে কেউ চিরদিন বেঁচে থাকতে পারেনা। মৃত্যুর পর মানুষের আমলনামা বন্ধ হয়ে যায়। এতদসত্ত্বেও তিনটি কাজের সওয়াব কেয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের কবরে পৌঁছে। কাজ তিনটি হলো মৃত ব্যক্তি জীবিত থাকাকালে যে সকল সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করেছেন ঐ গুলি যতদিন পর্যন্ত চালু থাকবে ততদিন তার কবর ঐ সকল কাজের সওয়াব পৌঁছে যাবে। দ্বিতীয়ত মৃত ব্যক্তি যদি কাউকে ইলম শিক্ষা দিয়ে থাকেন ঐ শিক্ষা যতদিন জারী থাকবে ততদিন তিনি সওয়াব পাবেন। তৃতীয়ত মৃত ব্যক্তি যদি নেক সন্তান রেখে যান তার জন্য ঐ সন্তানের দোয়া আল্লাহ্ কবুল করবেন। মৃত পিতা-মাতার জন্য দোয়া কিভাবে করতে হবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্তায়ালা শিখিয়ে দিয়েছেন। তা হলো-
‘‘হে আমার রব! তাঁদের প্রতি দয়া কর যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাদের প্রতিপালন করেছিলেন।’’
(সূরা বনি ইসরাঈল- ২৪)
কাজেই পিতা-মাতার উচিত সুসন্তান রেখে যাওয়া এবং সন্তানদের কর্তব্য হল পিতা-মাতার সেবা করা। এতেই সকলের মঙ্গল নিহিত রয়েছে।

আমি এমন অনেক নাটক, সিনেমা দেখেছি যাতে দেখানো হয়েছে ছেলের বাবা বা মাকে ছেলের বউ সহ্য করতে পারছে না ৷ কিন্তু এমন কোনো নাটক, সিনেমা দেখিনি যাতে দেখানো হয়েছে মেয়ের বাবা -মা বৃদ্ধ বয়সে কথাও যাবার জায়গা পাচ্ছেন না ; মেয়েটি চেষ্টা করছে যতটা সম্ভব সাহায্য করার, কিন্তু মেয়েটির স্বামী বা শ্বশুর বাড়ীর লোক সহ্য করতে পারছে না ৷ আশেপাশের লোক বলছে মেয়ের বাড়ী থাকবেন, কেমন দেখায়? কিন্তু এই মেয়েটির জন্যও তার বাবা -মায়ের অনেক ত্যাগ ছিল, এই মেয়েটির জন্যও তারা রাত জেগেছেন , ভেজা বিছানায় শুয়েছেন ৷ উপরন্তু তার নিরাপত্তার জন্য বাড়তি উদ্বেগ সহ্য করেছেন ; মেয়েটির বিয়ে দেবার সময় ছেলে পক্ষের যৌক্তিক অযৌক্তিক সব দাবী মেনে নিয়েছেন ; জামাই বা জামাই বাড়ীর কেউ আসলে টাকা থাকুক বা নাই থাকুক বাজারের বড় মাছ কিনেছেন ; কোমরে ব্যথা নিয়েও হাসি মুখে জামাইয়ের জন্য রান্না করেছেন ৷ এত কিছুর পরেও কেন এই বাবা মায়ের ত্যাগ , কষ্ট কোথাও মূল্যায়ন পায়না ? শুধুমাত্র “মেয়ের বাবা-মা ” হওয়ার কারণে ?
আমি যখনি কোনো নাটক বা সিনেমায় সন্তানের জন্য মায়ের ত্যাগ দেখেছি আশ্চর্যজনক ভাবে সন্তানটি সর্বদাই ছেলে সন্তান ছিল , একবারের জন্যও আমি মেয়ে সন্তান দেখিনি। কারনটা কি হতে পারে? -আমি অনেকবার ভাবার চেষ্টা করেছি । মায়েরা কি ছেলেদের জন্য বেশী ত্যাগ করে যা ছেলেদের মনে রাখা উচিত? মায়েদের ছেলে সন্তানের প্রতি আকর্ষনটা একটু বেশী হতে পারে (অনেক মনোবিজ্ঞানী মনে করেন) কিন্তু ত্যগ তো তারা মেয়েদের জন্য একটুও কম করেন না । তাহলে কেন মেয়ের মায়েদের ত্যাগটা সবসময় অনুচ্চারিতই থেকে যায়? আবার ভাবার চেষ্টা করেছি মেয়েরা হয়তো এমনিতেই বাবা মায়ের প্রতি যত্নশীল , ছেলেদের বরঞ্চ মনে করিয়ে দিতে হয় বাবা-মা তার জন্য কি কষ্ট করেছে । এটা হয়ত কোনো কোনো ক্ষেত্রে সত্যি হতে পারে কিন্তু যদি আমরা ছেলেদের জন্য বাবা মা কতটা কষ্ট করেছেন শুধু তাই পুন: পুন: উচ্চারণ করতে থাকি তবে কি মেয়ের বাবা-মায়েদের ত্যাগ ঢাকা পরে যাচ্ছে না ?
এতগেলো এ দুনিয়ার কথা ৷ মৃত্যু পরবর্তী দুনিয়ার ব্যাপারেও ছেলের বাবা মায়ের সুবিধা মেয়ের বাবা মায়েদের থেকে বেশী দেখানো হয় ৷ মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত কথাটা শুনলেই কেন যেন আমাদের মনে এক মা আর তার ছেলে এমন একটা ছবি ভেসে ওঠে ৷ একবার এক মহস্বলের এক মাওলানা যিনি ওই এলাকার মাদ্রাসার শিক্ষক এবং নিয়মিত ঈদের জামাতে ইমামতি করেন ও খুতবা দেন (অর্থাত একজন ধির্মীয় শিক্ষক এবং নেতা ) আমাকে বলছিলেন, ” মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত এবং বিয়ের পরে মেয়েদের জন্য মা-বাবার স্থান নিয়ে নেয় তার শ্বশুড়- শ্বাশুড়ী ৷” তিনি আমাকে যা বোঝাতে চাইছিলেন তার অর্থ দাড়ায় ছেলেদের বেহেশত সর্বদাই মায়ের পায়ের নীচে থাকে কিন্তু মেয়েদের বেহেশত বিয়ের সময় তার মায়ের পায়ের নীচ থেকে সরে গিয়ে স্থান নেয় শ্বাশুড়ীর পায়ের নীচে ৷ অর্থাত বিয়ের সময় মেয়ের মায়েরা বেহেশত হারান আর ছেলের মায়েরা বাড়তি একটি লাভ করেন ৷ এই সুত্র অনুযায়ী কোনো মহিলার যদি দুটি ছেলে থাকে তবে তিনি চারটি বেহেশতের উপরে দাড়িয়ে থাকেন কিন্তু যার দুটি মেয়ে তিনি মেয়েদের বিয়ে দেবার সাথে সাথে বেহেশতশুন্য হয়ে যান ৷ এই যদি হয় অবস্থা তাহলে কোন্ নারী চাইবে মেয়ের মা হতে? কে চাইবে কষ্ট করে মেয়ে পেটে ধরে, তার জন্ম দিয়ে, তাকে বড় করার সব কষ্ট সয়েও বেহেশতশুন্য হতে ? তার থেকে ভালো ছেলের মা হওয়া – ছেলের জন্য কষ্ট করার পুরস্কার হিসাবে পার্মানেন্ট একটা বেহশত তো থাকবেই তার উপরে বোনাস হিসাবে মেয়ের মায়েরটাও পাওয়া যাবে। এভাবে কি আমরা সবাই মিলে এমন একটা সামাজিক চাপ তৈরী করছি না যাতে সবার মধ্যে ছেলে সন্তান পাওয়ার আকাঙ্খা বাড়ে, আর মেয়ে সন্তানের আকাংখা কমে ? আর এ থেকে তৈরী হয় ভারসাম্য হীনতা আর পরিনামে জন্ম নেয় নানা রকম পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা ।
আমরা জানি রাসুল (সঃ) এর সময় মক্কার লোকেরা মেয়ে শিশু সন্তানদের জীবন্ত কবর দিত; কেন? যে বাবা এ কাজটি করত তার কি একটুও কষ্ট হতনা ? অবশ্যই হত। ইতিহাস স্বাক্ষী যে একাজ করার সময় তাদের বুক ফেটে যেত; চোখের পানিতে মুখ ভেসে যেত; তারপরও কেন তারা এটা করত ? কারণ সমাজের চাপ। সমাজ এমন এক পরিবেশ তৈরী করে রেখেছিল যাতে ছেলের পিতা-মাতা নানা ভাবে সুবিধা ভোগ করত আর মেয়ের পিতা-মাতাদের পড়তে হত অসুবিধা জনক অবস্থানে – কাজেই কেউই মেয়ে সন্তান চাইতো না ।
আমাদের এই আধুনিক যুগেও যদি আমরা নাটক , সিনেমা , সাহিত্য সর্বত্র ছেলের বাবা মায়েদের ত্যাগ কে হাই লাইট করি আর মেয়ের বাবা মা দের ত্যাগ কে অবহেলা (over look) করি তবে আমরা ও এমন এক পরিবেশ তৈরী করছি যাতে সবার মধ্যে ছেলের বাবা মা হওয়ার ইচ্ছা বাড়ে, আর মেয়ের বাবা মা হওয়ার ইচ্ছা নিরুত্সাহিত হয়। আমরা কি এভাবে মেয়ে ফীটাস এবরশন কে উত্সাহিত করছি না?
আমি একবার খুব নামকরা একজন ধর্মীয় বক্তার ওয়াজ শুনছিলাম ‘পিতা মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য’ এর উপর । বক্তব্যের শব্দ চয়ন এবং ধরন (Tone) এমন ছিল যে ওখানে উপস্থিত সব পুরুষের মনে হলো বাবা মায়ের প্রতি দয়িত্ব পালনে তারা যথেষ্ট মনোযোগী হতে পারছেন না এবং এর সম্ভাব্য কারণ বা বাধা হলো স্ত্রী । অপরপক্ষে উপস্থিত প্রতিটা নারীর মনে হলো যে শশুড়-শাশুড়ীর প্রতি দায়িত্ব পালনে তার ভুমিকা সমালোচিত হলো । এমন ব্যাখা নিসন্দেহে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে ভালো প্রভাব ফেলবে না । শুধু তাই না, এধরনের ব্যাখা যেহেতু ছেলের মায়েদের সুবিধা জনক স্থানে রাখছে সেহেতু ওই ওয়াজে উপস্থিত সব নারীর মনেই (আমার নিজেরও ) ছেলের মা হওয়ার ইচ্ছা তৈরী হয়েছে , মেয়ের মা হতে তেমন কারোই সেদিন ইচ্ছা হয়নি । ওয়াজ গুলো কি এমন হতে পারে না যা শুনে প্রত্যেকটা পুরুষ ভাবতে পারে, সন্তান হিসাবে তার বাবা মায়ের সাথে সে নিজে ভালো আচরণ করছে কিনা? এবং নিজ স্ত্রীকে তার বাবা মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালনে কোনো প্রকার অসহযোগিতা করছে কিনা? একই ভাবে প্রত্যেকটি নারীও ভাবতে পারে সন্তান হিসাবে তার বাবা মায়ের সাথে সে ভালো আচরণ করছে কিনা? এবং নিজ স্বামীকেও তার বাবা মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালনে কোনো প্রকার অসহযোগিতা করছে কিনা ?
আমি এমন অনেক ইসলামিক ছেলে দেখেছি যারা নিজেরা অহরহই নিজের বাবা মাকে ধমকের সুরে কথা বলেন , রেগে গেলে রূঢ় আচরণ করেন কিন্তু স্ত্রীকে নির্যাতন করেন এই অজুহাতে যে সে তার শশুড়-শাশুড়ীর সঙ্গে যথেষ্ট ভালো আচরণ করেনা কেন; কাজের সহযোগীতার জন্য লোক থাকার পরেও অফিস থেকে ফিরে এসে ভাত রান্না করে দেয়না কেন । এরকম অদ্ভুত আচরণের কারণ সম্ভবতঃ আমাদের চার পাশের ‘পিতা মাতার প্রতি কর্তব্যের’- এই ধরনের পুরুষ কেন্দ্রিক ব্যাখা। কারণ এইধরনের ব্যাখ্যা এমন একটা ধারণা তৈরী করে যে পুরুষদের অধিকার রয়েছে তার স্ত্রী কে নির্যাতন করার যদি তার মনে হয় স্ত্রী তার চাহিদা মত তার বাবা মায়ের সাথে ব্যবহার করছে না ।
একবার ইউনিভার্সিটির কিছু ছাত্র আমার অফিসে আসলো ,” ম্যাডাম , মা-বাবা বললে নাকি স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিতে হবে ? ” আমি ওদেরকে ইসলাম পড়াতাম না কিন্তু ওদের মনে কোনো কারণে এই বিশ্বাস হয়েছে যে আমি হয়ত ওদের যুক্তি পূর্ণ কোনো সমাধান দিতে পারব । আমি জানতে চাইলাম- “তোমাদের এমন ধারণার কারণ কি?” ওরা বলল আমারই এক কলিগ, যিনি ছাত্রদের মাঝে মাঝেই ইসলাম সম্পর্কে সচেতন করেন এবং এ কারণে ছাত্রদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়ও, তিনি আজ ক্লাসে এ কথা বলেছেন । তিনি বলেছেন,” ইসলামে বাবা মায়ের অধিকার এত বেশী যে তারা যদি বলে স্ত্রীকে তালাক দিতে হবে তবে ছেলেদের দায়িত্ব হলো স্ত্রীকে তালাক দেয়া”। আমার কলিগের এই কথার প্রতিবাদ ছাত্ররা করতে পারেনি ঠিকই কিন্তু সাধারণ জ্ঞানে এটা ওদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। আরো সহজ ভাবে বললে বলতে হয় এটা তাদের কাছে অন্যায় মনে হয়েছে এবং ওদের মনে প্রশ্ন তৈরী হয়েছে ইসলাম এমন অন্যায়কে কিভাবে উত্সাহিত করতে পারে বা কিভাবে ইসলাম বাবা মাকে জালিম হবার ছাড়পত্র দিতে পারে?
আমি ওদেরকে বললাম –
কোরআনে বাবা-মা সম্পর্কে তিন ধরনের আয়াত এসেছে –
১. শুধু বাবা মার প্রতি সন্তানের দ্বায়িত্ব সম্পর্কিত আয়াত (কি করতে হবে)
২. বাবা মার অধিকার ও অন্যান্যদের অধিকার (একসঙ্গে)সম্পর্কিত আয়াত
৩. বাবা-মার অধিকারের সীমা সম্পর্কিত আয়াত (কোন কোন ক্ষেত্রে বাব মায়ে কোনো অধিকার নেই)
 প্রথম ধরনের আয়াত গুলোর ( শুধু বাবা মার প্রতি সন্তানের দ্বায়িত্ব সম্পর্কিত) মধ্যে পড়ে সুরা বনি ইসরাইলের ২৩ ও ২৪ নং আয়াত, সুরা লুকমানের ১৪ নং আয়াত ও সুরা আহ্কাফের ১৫ নং আয়াত।.
” তোমার প্রতিপালক আদেশ করছেন, তোমরা তাকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করনা এবং তোমরা তোমাদের পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো ; তাদের একজন কিংবা উভয়ই যদি তোমাদের জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাহলে তাদের সাথে বিরক্তি সূচক কিছু (উফ ) বলো না এবং ধমক দিওনা, তাদের সাথে সম্মান সূচক নম্র কথা বলো “।
অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো, এবং বলো, হে আমার মালিক তাদের প্রতি ঠিক সেভাবে দয়া করো যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন পালন করেছিলেন। ” বনি ইসরাইল ২৩, ২৪
“আমি মানুষকে তাদের পিতা মাতার ব্যাপারে সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি , তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দুই বছর পর সেই সন্তান বুকের দুধ খাওয়া ছেড়েছে , সুতরাং আমার শোকর আদায় করো এবং পিতা মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় করো ; তোমাদেরকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে ।” সুরা লুকমান ১৪
আমি মানুষকে আদেশ দিয়েছি সে যেন নিজের পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করে ; কেননা তার মা তাকে অত্যন্ত কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে প্রসব করেছে এবং এভাবে গর্ভে ধারণ করতে ও স্তন্য পান করানোর সময় তিরিশটি মাস; অতঃপর সে তার পূর্ণ শক্তি প্রাপ্ত হয় এবং ৪০ বছরে উপনীত হয় ; তখন সে বলে , হে আমার মালিক , এবার তুমি আমাকে সমর্থ দাও ……” আহকাফ ১৫
 দ্বিতীয় ধরনের আয়াতে অন্যান্যদের অধিকারের সাথে সাথে পিতামাতার অধিকারের কথাও বলা হয়েছে – যেমন সুরা আনআম ১৫১ , ” তুমি বল , ‘ আসো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য যা নিষিদ্ধ করেছেন তা বলে দেই , তোমরা আল্লাহর সাথে কোনো শরীক করবেনা , পিতা মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে, দারিদ্রের আশংকায় কখনও তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না ……..”
সুরা নিসা ৩৬ , ” তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে ও কোনো কিছুকে তার সাথে শরীক করবে না এবং পিতা – মাতা , আত্মীয় স্বজন , ইয়াতিম , অভাব গ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী সাথী , পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। ”
 আর তৃতীয় ধরনের আয়াতে পিতা মাতার অধিকারের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে – বলা হয়েছে কোথায় কোথায় বাবা মায়ের অধিকার নেই ।
প্রথমত, পিতা মাতা আল্লাহর সাথে কোনো কিছু শরীক করতে বললে তাদের আনুগত্য করা যাবে না। সুরা লোকমানে আল্লাহ বাবা মায়ের প্রতি ‘সদ্ব্যবহার’ কি তা ব্যাখা করেছেন – “আমি মানুষকে তাদের পিতা মাতার ব্যাপারে সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি , তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দুই বছর পর সেই সন্তান বুকের দুধ খাওয়া ছেড়েছে , সুতরাং আমার শোকর আদায় করো এবং পিতা মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় করো ; তোমাদেরকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে” এর পরপরই বলছেন “সদ্ব্যবহার” মানে “আনুগত্য” না। আল্লাহ বলছেন, ” তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে পীড়া পীড়ি করে যে তুমি আমার সাথে শিরক করবে, যে ব্যাপারে তোমাদের কোনো কোনো জ্ঞানই নেই , তাহলে তুমি তাদের কথা মানবে না , তবে দুনিয়ার জীবনে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে , …..”
দ্বিতীয়ত, অন্যায় কাজে সন্তানের সমর্থন পাবার অধিকার পিতা মাতার নেই , সে অন্যায় যে কারো ক্ষেত্রেই হক না কেন।
“হে ঈমানদারগন, তোমরা সর্বদাই ইনসাফের ওপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থেকো এবং আল্লাহর জন্য সত্যের সাক্ষী থেকো যদি তা তোমার নিজের, নিজ পিতামাতা ও নিকট আত্মীয়দের বিপরীতে যায় তবুও।” – সুরা নিসা ১৩৫
অর্থাত পিতামাতা অন্যায় করলে বা অন্যায় দাবী করলে আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন তার বিরোধিতা করার এবং ন্যায়ের পক্ষে থাকার ; তবে মনে রাখতে হবে তাদের সঙ্গে ব্যবহার ভালো করতে হবে এবং ধমক দেয়া যাবে না ।
এভাবে আমার ছাত্র ছাত্রীরা জেনে গেল তাদের কে পিতামাতার অধিকার সম্পর্কে খুবই খন্ডিত ধারণা দেয়া হয়েছিল। যার ফলে এমন এক ধারণার তৈরী হয়েছিল যা ইসলামের সঠিক ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত। এরূপ খন্ডিত ধারণার ফল আমাদের সমাজে ভালো হয়নি , এটি খুলে দিয়েছে অনেক অবিচারের দরজা – এটি ব্যবহৃত হয়েছে ছেলে বা ছেলে পক্ষের সুবিধা বৃদ্ধির আর মেয়ে ও মেয়ে পক্ষের সুবিধা বঞ্চিত করার হাতিয়ার হিসাবে ।
কেন এমন খন্ডিত ধারণা সৃষ্টি হলো ? কারণ সম্ভবতঃ আমরা যেসব ইসলামিক আলোচনা বা ওয়াজ শুনি এবং যেসব ইসলামিক সাহিত্য পড়ি তাতে শুধুমাত্র প্রথম ধরনের আয়াত গুলোকেই তুলে ধরা হয় , অন্য ধরন দুটি ততটা গুরুত্ব পায়না। বিশেষ করে সুরা নিসার ১৩৫ নং আয়াত টি সম্পূর্ণ অনুচ্চারিতই থেকে যায় , “হে ঈমানদারগন, তোমরা সর্বদাই ইনসাফের ওপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থেকো এবং আল্লাহর জন্য সত্যের সাক্ষী থেকো যদি তা তোমার নিজের, নিজ পিতামাতা ও নিকট আত্মীয়দের বিপরীতে যায় তবুও “- ফলে সন্তানরা তো বটেই বাবা মায়েরাও ভেবে বসেন তাদের অধিকার অসীম; এমনকি তারা সন্তানকে অন্যায় আদেশ করারও অধিকার রাখেন। আমাদের সামাজিক পারিপার্শিকতা এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছেলে সন্তানদের পিতামাতকে করে তোলে অনিয়ন্ত্রিত শক্তির ধারক। অথচ এই আয়াতটি যদি পিতা-মাতার অধিকারের সীমা হিসাবে উচ্চারিত হত তবে বাবা মায়েরাও সন্তানের কাছে কিছু দাবী করার আগে ভাবতেন তাদের এ দাবী করার অধিকার আসলেই আছে কিনা , তারা এমন কিছু দাবী করছেন কিনা যা ন্যায় ও ইনসাফের বাইরে। এমনটা হলে অনেক পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা তৈরীই হত না ।
কোরআনের প্রথম দু’ধরনের আয়াত সমূহ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে পিতা মাতার প্রতি ” সদ্ব্যবহার বা ভালো ব্যবহার ” এর কথা বার বার বলা হয়েছে এবং এখনে এটাও লক্ষনীয় যে একই ভালো ব্যবহারের কথা আরো অনেকের প্রতিও করতে বলা হয়েছে । এ আয়াত গুলোতে বাবা মায়ের জন্য বিশেষভাবে যা বলা হয়েছে তা হলো –
১. বিরক্তি সূচক কিছু (উফ ) বলো না এবং ধমক দিওনা
২. সম্মান সূচক নম্র কথা বলো
৩.বিনয়াবনত থেকো
৪. দোয়া কর
৫. কৃতজ্ঞতা আদায় করো
আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে অনেকে নিজে অহরহ নিজের বাবা -মার সাথে ধমকের সুরে কথা বলেন , রেগে গেলে রূঢ় আচরণ করেন; কিন্তু স্ত্রীকে নির্যাতন করেন এই অজুহাতে যে সে তার শশুড়-শাশুড়ীর সঙ্গে যথেষ্ট ভালো আচরণ করছেনা এবং আমাদের সমাজে এমন আচরণকে অনেক ক্ষেত্রেই ‘খোদা ভীরু ‘ আচরণ মনে করা হয়। কারণ মনে করা হয় তারা এটা করছেন নিজের বাবা মায়ের সাথে তার স্ত্রীর ভালো ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য। অনেকে শুধু স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেই ক্ষান্ত হন না বরং এই অজুহাতে নিজ শশুড়-শাশুড়ীর সাথেও খারাপ আচরণ করেন। উপরে উল্লিখিত তিন ধরনের আয়াতের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি এই ব্যক্তিটি তিন ভাবে কোরআনের বিরুদ্ধ আচরণ করছেন –
১. কোরআন সবার আগে বলেছে নিজেকে বাবা মায়ের সঙ্গে নম্র ভাষা ব্যবহার করতে ও বিনয়াবনত থাকতে এবং তিনি তা করছেন না ;
২. স্ত্রীর উপর নির্যাতন করছেন;
৩. নিজ শশুড়-শাশুড়ীর সাথে সদ্ব্যবহার করছেন না (অথচ স্ত্রীর কাছে চাইছেন সে তার শশুড়-শাশুড়ীর সাথে ভালো ব্যবহার করুক)
সুরা নিসা ৩৬ ,” এবং পিতা – মাতা , আত্মীয় স্বজন , ইয়াতিম , অভাব গ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী সাথী , পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস দাসীদের
প্রতি সদ্ব্যবহার করবে ।”
এখানে আরো একটি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় লক্ষ্যনীয়- কোরআনে বাবা মায়ের প্রতি সদ্বাবহারের আয়াত গুলো শুধু “ছেলের বাবা মায়ের ” জন্য আসেনি। এ সবকটি আদেশই ছেলে সন্তান ও মেয়ে সন্তান উভয়ের জন্যই এসেছে । ছেলের বাবা-মায়েদের এসব অধিকার রয়েছে আর মেয়ের বাবা-মায়ের নেই এমনটা কোরআন বলেনি। কোরআন ছেলে সন্তান ও মেয়ে সন্তান উভয়ের মা বাবাকেই তাদের ত্যাগের স্বীকৃতী দিয়েছে “আমি মানুষকে তাদের পিতা মাতার ব্যাপারে সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি , তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং….”সুরা লুকমান ১৪ ; ” আমি মানুষকে আদেশ দিয়েছি সে যেন নিজের পিতামাতার সাথে ভালো ব্যবহার করে ; কেননা তার মা তাকে অত্যন্ত কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে প্রসব করেছে …” আহকাফ ১৫। কিন্তু আমাদের নাটক, সিনেমা, এমনকি অধিকাংশ ইসলামী সাহিত্যও মেয়ের বাবা-মায়েদের ত্যাগকে উপেক্ষা করে যাচ্ছে । আমি আশা করব যারা ইসলামী সাহিত্য লিখছেন, ইসলামিক আলোচনা করছেন, বা গল্প -নাটক লিখছেন তারা যখনি পিতা-মাতার হক বিষয়টি আনবেন তখন অবশ্য অবশ্যই পরিপূর্ণ ছবিটি দিবেন যাতে করে মেয়ের বাবা মায়েদের ত্যাগটি আড়ালে পড়ে না যায় আর কারো মনে মেয়ের মা বাবা হবার প্রতি অনীহা তৈরী না হয়।

 লিখেছেন @ মোঃ হাদিউজ্জামান হাসিব







  


 

9 comments:

  1. অনেক ভালো লাগলো ভাইজান।

    ReplyDelete
  2. মোঃ হাসিব2 November 2015 at 19:46

    ধন্যবাত

    ReplyDelete
  3. অনেক সুন্দর

    ReplyDelete
  4. dear pls give me when taken food that time can given salam if any one given salam that time can given answer.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার প্রশ্ন ২ ধরনের।
      ১ম প্রশ্নঃ
      আমাদের সমাজে প্রচলন আছে, খাওয়ার সময় সালাম দিতে হয় না। এটা কি ঠিক?

      উত্তর : না, এ কাজটি শুদ্ধ নয়। খাওয়ার সময় সালাম দেওয়া জায়েজ, আবার সালামের জবাব দেওয়াও জায়েজ। কারণ, খাওয়ার সময় অন্য সব কথা বলা হচ্ছে। সব কথা বলা জায়েজ রয়েছে, তাহলে সালাম দেওয়া কেন নিষেধ থাকবে। কে বা কারা নিষেধ করেছে সালাম দিতে?

      বলা হয়, আপনি খাওয়া-দাওয়া করছেন, তাই সালাম দিতে পারলাম না। এ ক্ষেত্রে কথা কিন্তু বলা হয়েই গেল। এটি আমাদের একটি ভুল কাজ এবং ভুল ধারণা।

      আপনার ২য় প্রশ্নঃ
      খাবারের সময় সালাম দেওয়া-নেওয়া যাবে কি? বা খাবার সময় সালাম দেয়া ও সালামের জবাব দেয়া যাবে কি?

      জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

      খাবারের সময় সালাম দেওয়া যাবে এবং নেওয়া যাবে। প্রচলিত যে ধারণা রয়েছে যে, ‘খাদ্য গ্রহণকারীকে সালাম দেয়া যাবে না’ এর কোন অস্তিত্ব নেই। তবে যদি কারো মুখের ভেতরে খাবার থাকে, তাহলে তাকে সালাম না দেওয়া ভাল। এ অবস্থায় কেউ সালাম দিলে উত্তর প্রদান ওয়াজিব নয়। (সাখাবী, আল মাকাসিদ, পৃ. ৪৬০, মোল্লা আলী কারী, আল-আসরার, পৃ. ২৬৫)
      এ সম্পর্কে (কাশফুল খুফা) কিতাবে বলা হয়েছে (لا سلام على أكل) ليس بحديث) অর্থাৎ খাবার চলাকালীন সময়ে সালাম দেওয়া যাবে না, এটা কোন হাদিস নয়।
      ইমাম নববী রহ. তাঁর আযকার কিতাবে বলেন, খাবার চলাকালীন মুখে খাবার থাকা অবস্থায় সালাম দিলে জবাব দেওয়া জরুরি নয়। তবে যদি মুখে লোকমা না থাকা অবস্থায় সালাম দেয় তাতে কোন সমস্যা নেই এবং উত্তর প্রদান জরুরি।
      শায়খ আব্দুর রহমান আস সাহিম বলেন, সমাজে প্রচলিত খাবার সময় সালাম দেওয়া যায় না বলে যে কথাটি রয়েছে তা সালামের ব্যাপারে নয়, মোসাফাহার ব্যাপারে। সুতরাং সালাম দেওয়া ও নেওয়াতে কোন সমস্যা নেই।
      (সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃ. ৪৬০, মোল্লা কারী, আল আসরার, পৃ. ২৬৫, আল-আজলূনী, কাশফুল খাফা ২/৪৮৮, যারকানী, মুখতাসারুল মাকাসিদ, পৃ. ২০৩। )

      উত্তর দিয়েছেন
      মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী নকশবন্দী

      Delete
  5. মাশাল্লাহ সত্য

    ReplyDelete

Thanks for comments