সকল
প্রসংশা আল্লাহর এবং সালাত ও সালাম তার হাবীব মুহাম্মাদ মুস্তফা (স:) এবং
তার সাহাবীদের উপর, আজ আমরা আলোচনা করবো তাহিয়াতুল মসজিদের ব্যাপারে। তাহিয়াতুল
মসজিদ বা দুখুলুল মসজিদ একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।।। এই সুন্নাতটির
গুরুত্ব বুঝাতে নবী (স:) খুতবা দেয়ার মাঝে বিরতি দিয়ে করে সালাত আদায় করতে
বলেছেন। যদিও খুতবা
দেয়ার সময় মুসল্লিদের কথা বলা নিষিদ্ধ। তাই নবী (স:)
খুতবার মাঝে বিরতি দিয়ে হযরত সুলাইক গাতফানী (রাঃ) সালাতের নির্দেশ দেন এবং
সালাত শেষে আবার খুতবা দেয়া শুরু করেন।।
দলিল হল:
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) এর খুৎবা দানকালে
সেখানে এক ব্যক্তি আগমন করেন । তিনি তাকে বলেন, হে অমুক! তুমি কি
(তাহিয়াতুল মাসজিদ) সালাত পড়েছ? ঐ ব্যক্তি বলেন, না। নবী ( সাঃ ) বলেন,
তুমি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় কর । অন্য হাদীসে বলা হয়েছে তুমি সংক্ষিপ্ত
ভাবে দুই রাকাআত (তাহিয়াতুল মাসজিদ) সালাত আদায় কর।" [বুখারী হা/৮৮৩ ,
৮৮৪ ; মুসলিম হা/১৮৯৫ , ১৮৯৬ , ১৮৯৭ , ১৮৯৮ , ১৮৯৯ , ১৯০০ ; তিরমিযী ; ইবনে
মাজাহ ; নাসাঈ হা/১৪০৩ ; আবু দাউদ হা/১১১৫ , ১১১৬ , ১১১৭]
এই
দুই রাকাত নামায যে জুমআ'র সুন্নত নয়, বরং এ যে মসজিদে প্রবেশের(তাহিয়াতুল
মসজিদের নামায) নামায এবং আল্লাহ'র গৃহের প্রতি সম্মান প্রদশর্ন, আল্লাহ'র
প্রতি আনুগত্যের সিজদাহ ও রাসুল(সাঃ)এর অবাধ্যতা না করা।
রাসুল(সাঃ)
বলেছেনঃ "ইমাম মিম্বরে বসার আগ পযর্ন্ত যত রাকাত খুশি নফল নামায আদায়
করবে"।( মুসলিম; মুততাকাফ আলাইহ, আবু দাউদ, মিশকাতঃ হা/১৩৫৮, ১৩৮৪, ৮৭)
"এবং এরপর চুপচাপ মনযোগ সহকারে খুতবা শুনবে"।(বুখারি; মুসলিম, মিশকাতঃ হা/১৩৮১-৮২; ফিকহুস সুন্নাহঃ ১/২৩৬)
তবে,
সাহাবিরা জুমুআ'র দিন আগে ভাগেই মসজিদে আসতেন এবং খুতবার আগ পযর্ন্ত নফল
নামায আদায় করতেন। আর সেই অমুক ব্যাক্তি হলেন সুলাইক গাতফানী (রাঃ), তিনি
যতক্ষণ পর্যন্ত নামায পড়তেছিলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত নবীজী সাঃ খুতবা বন্ধ
রাখেন। যা স্পষ্ট প্রমাণবাহী এটি বিশেষ কারণে করা হচ্ছে। নতুবা খুতবা বন্ধ
রাখার কোন মানে হয় না।
এখানে কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে,
প্রথমত: খুতবার সময় খুতবা শোনা ওয়াজিব, কথা বলা নিষিদ্ধ,
দলিল হলো:
০১. হযরত সা’লাবা বিন আবি মালিক আল কুরাজী রাঃ বলেন-“নিশ্চয় ইমামের
মিম্বরে বসা নামায বন্ধ করে দেয়, আর তার কথা বলা কথাকে বন্ধ করে দেয়”।
{তাহাবী শরীফ, ১/৩৭০, হাদীস নং-২০১৪} এই হাদীসটি সহীহ।
০২. হযরত আবু
হুরায়রা রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখন তুমি তোমার পাশের জনকে জুমআর
দিন বল-চুপ থাক এমতাবস্থায় যে, ইমাম সাহেব খুতবা দিচ্ছে, তাহলে তুমি অযথা
কাজ করলে। (সহীহ বুখারী: ৮৮৭, সহীহ মুসলিম: ২০০৫, আবু দাউদ: ১১১২, ইবনে
মাজাহ: ১১১০, মুয়াত্তায় মালিক: জুম্মার সালাত অধ্যায়: রেওয়াত:৬, নাসায়ী
শরীফ: ১৪০৪, ১৪০৫, তিরিমিজি: ৪৮১)
দ্বিতীয়ত: জুম্মার দিন আজানের পড়েই মসজিদে যেতে হবে, কেননা জুম্মার আজানের পড়ে সকল দুনিয়াবি কাজ হারাম করা হয়েছে।
দলিল হল:
০১.
মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাজের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর
স্মরণের পানে তাড়াতাড়ি করো এবং বেচাকেনা বন্ধ কর । এটা তোমাদের জন্যে
উত্তম যদি তোমরা বুঝ ।” (আল-জুমুয়াহ ৬২:৯)
০২. ইবনে আওস (রা:) থেকে
বর্নিত: তিনি বলেন, রাসুল (স:) আমাকে বললেন-যে ব্যক্তি গোসল করল, সকাল সকাল
মসজিদে আসলো, আমামের নিকটবর্তি হয়ে মনোযোগ সহকারে খোৎবা শুনলো এবং নিশ্চুপ
থাকল-তার জন্য প্রতি কদমের বিনিময়ে এক বছরের (নফল) রোজা ও নামাজের সাওয়াত
রয়েছে। তিরমিজি শরীফ:৪৪৬ (আবু ঈসা বলেন-এ হাদিসটি হাসান)
তৃতীয়ত:
তারাতারী মসজিদে গিয়ে দু'রাকাত সালাত আদায় করতে হবে। দু্ই রাকাত সালাত
শুধু জুম্মার দিনে নয় প্রত্যেক সময় যখন আপনি মসজিদে ঢুকবেন তখনই পড়তে হবে।
দলিল হল:
আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন ,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন
তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সে যেন দু’রাকাত সালাত আদায় করা
ব্যতীত না বসে।" [বুখারী হা/৪৪৪ , ১১৬৭ ; মুসলিম হা/ ৭১৪ ; তিরমিযী হা/ ৩১৬
; নাসাঈ হা/ ৭৩০ ; আবু দাউদ হা/ ৪৬৭ ; ইবনু মাজাহ হা/ ১১২৩ ; আহমাদ হা/
২২০১৭ , ২২০৭২ , ২২০৮৮ , ২২১৪৬ ;দারেমী হা/ ১৩৯৩ ; রিয়াদুস সালেহীন হা/
১১৫১]
চতুর্থত: জুম্মার খুতবার আগে চার রাকাত ক্বাবলাল জুম্মা পড়তে হবে, যেটা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) এর সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত।
দলিল হল:
০১. আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসউদ (রা:) জুম্মার (ফরযের ) পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত
(সুন্নাত) নামায আদায় করতেন। তিরমিজি: ৫২৩-আলবানী (রহ) সহীহ বলেছেন”
০২.
আরো হাদিস পাওয়া যায়, তার মধ্যে একটি হাদিস নিম্মরুপ: ইবনে আব্বাস (রা:)
থেকে বর্নিত, তিনি বলেন: নবী (স:) জুম্মার (ফরয) সালাতের পর্বে চার রাকাত
সালাত আদায় করতেন এবং এর মধ্যে কোন ব্যবধান করতেন না (বরং এক সালামে চার
রাকাত আদায় করতেন)ইবনে মাজাহ: ১১২৯
বায়দাল জুম্মার ব্যাপারে অনেক হাদিস আছে, তার মধ্যে একটি নিম্মরুপ:
আবু
হুরাইরা (রা:) থেকে বর্নিত তিনি বলেন, রাসুল (স:) বলেছেন: তোমরা জুম্মার
(ফরয) সালাতের পর সালাত আদায় করলে চার রাকাত (সুন্নাত) সালাত আদায় করবে।
ইবনে মাজাহ: ১১৩২
পঞ্চমত: দুই রাকাত তাহিয়াতুল মসজিদ পড়া একটি নফল সুন্নাত, কিন্তু গুরুত্ব অনেক। (তাহাজ্জুতের সালাতের গুরুত্ব অনেক কিন্তু নফল)
ষষ্ঠত: কেউ যদি খুতবার সময় মসজিদে প্রবেশ করে তবে সে ব্যাপারে হুকুম কি হবে?
উত্তরে
একটু গভির ভাবে চিন্তা করলেই অনুধাবন করা যায়। নবী (স:) খুতবা বিরতি দিয়ে
সাহাবীকে সালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেলেন। খুতবা চলাকালীন নয়। আর সেই
অমুক ব্যাক্তি হলেন সুলাইক গাতফানী (রাঃ), তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত নামায
পড়তেছিলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত নবীজী সাঃ খুতবা বন্ধ রাখেন। যা স্পষ্ট
প্রমাণবাহী এটি বিশেষ কারণে করা হচ্ছে। নতুবা খুতবা বন্ধ রাখার কোন মানে
হয় না। কারণ খুতবা চলাকালীন খুতবা শোনাই ওয়াজিব। নফল এবং সুন্নাতের চেয়ে
ওয়াজিবের গুরুত্ব অনেক বেশি। এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি কাবলাল জুম্মাও পড়তে
পাড়বেন না, তারণ খুতবা শুরু হয়েগেছে।। এব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মাঝে মতভেদ
দেখা যায়, ইমাম শাফেয়ী বলেন, খুতবা চলাকালীন সময়ে এই দুই রাকাত সালাত আদায়
ব্যতিক্রম (করতে পারবে) কিন্তু অন্যান্য ইমামগন এ এবিষয়ে এক মত যে জুম্মার
খুতবা চলাকালীন কোন ব্যাক্তি যদি মসজিদে প্রবেশ করে তবে তার জন্য কোন সালাত
নেই, এমনকি ক্বাবলাল জুম্মাও।
আর এটা খুবই অস্বাভাবিক যে ইমাম প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য খুতবার মধ্যে বিরতি দিবেন।।।
সপ্তমত: অনেক দলিল আছে যেখানে নবী (স:) তুহিয়াতুল মসজিদ সালাত আদায় করতে বলেন নি।
দলিল হলো:
০১.
একদা ইবনে মাসউদ রাঃ রাসূল সাঃ মিম্বরে বসা অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করলেন।
রাসূল সাঃ সবাইকে বসে পড়ার হুকুম করলেন। সে সময় ইবনে মাসউদ রাঃ মসজিদে
নববীর দরজায় ছিলেন। তিনি সেখানেই বসে গেলেন। তখন রাসূল সাঃ বললেন-“ইবনে
মাসউদ! তুমি আগে চলে আস”! {সুনানে আবু দাউদ-১০৯১} আগে এসে বসার কথা বলেছেন
কিন্তু তাঁকে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়ার হুকুম দেন নি।
০২.
ইস্তিস্তাকার হাদীসে এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর কাছে বৃষ্টি না হওয়ার অভিযোগ
নিয়ে আসে, তখন সে ফিরে গিয়ে এক সপ্তাহ পর আবার বন্যা হওয়ার সংবাদ নিয়ে
আসে। এই সাহাবী উভয় দাবি নিয়ে এসেছিলেন এমন সময় যখন রাসূল সাঃ খুতবা
দিচ্ছিলেন, {বুখারী শরীফ, নামাযে ইস্তিস্কা অধ্যায়} তাঁকেও রাসূল সাঃ
তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়ার নির্দেশ দেন নি।
০৩.ইবনে
শিহাব(রহ:) সা’লাবা ইবনে আবি মালিক কুরাজী (রহ:) থেকে বর্নিত, তিনি
(সা’লাবা) তাহার নিকট হবে বর্ননা করিয়াছেন যে, উমর ইবন খাত্তাব (রা:) এর
খিলাফাতকালে জুম্মার দিন তাহারা উমর ইবনে খাত্তাব (রা:) আগমন করা পর্যন্ত
নামায পড়িতেন। উমর (রা:) আগমন করিতেন এবং মিম্বরে বসিতের এবং মুয়াযযিনগন
আযান দিতেন। সা’লাবা (রহ:) বলেন: আমরা তখনও পরস্পর কথাবার্তা বলিতাম.
মুয়াযযিন যখন আযান শেষ করিতেন এবং উমর (রা:) খুতবা পাঠ করার জন্য দাড়াইতেন,
তখনআমরা চুপ হইয়া যাইতাম। অত:পর কেউ কোন কথা বলিতেন না। ইবন শিহাব (রহ:)
বলেন(ইহাতে বোঝাগেল) ইমামের আগমন নামাযকে নিষিদ্ধ করিয়া দেয় এবং তাহার
কালাম (খুতবা) কথাবার্তাকে নিষিদ্ধ করিয়া দেয়।(মুয়াত্তা মালিক, রেওয়াত:৭,
জুম্মার সালাত অধ্যায়)
উপরক্ত হাদিসে ইমামের আগমন মূলত
খুতবার জন্য প্রস্তুতের কথা বলা হয়েছে আর তার পর খুতবার কথা বলা হইয়াছে, যা
কথাবার্তা এবং সালাতকে নিষিদ্ধ করিয়া দেয়।।।
আমি দেখেছি
তাবলিগের মেহনতের সাথীরা দুখুলুল মসজিদ খুব শক্তভাবে পালন করেন। যখনই
মসজিদে প্রবেশ করেন তখনই তারা এই সালাত আদায় করেন। আপনাদের মতামত জানান।।
সার্বিক সহযোগিতায়ঃ
This comment has been removed by the author.
ReplyDelete