ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে
নামায হলো দ্বিতীয়। কালেমার পরই উহার স্থান। আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় রাসূল
(সাঃ) কে উর্ধ্বাকাশে মেরাজে নিয়ে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যমে মুসলিম জাতির
উপর এই নামায ফরয করেছেন। ইহা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় ও ফজীলতপূর্ণ
ইবাদত।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত,
তিনি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন, “তোমরা কি মনে কর, তোমাদের কারো ঘরের
সামনে দিয়ে যদি একটি নদী প্রবাহিত থাকে এবং প্রতিদিন সে উহাতে পাঁচ বার
গোসল করে, তবে তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি? সাহাবাগণ বললেন, তার শরীরে কোন
ময়লাই বাকী থাকতে পারেনা। তিনি বললেন, এরূপ উদাহরণ হল পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের
ক্ষেত্রেও। এভাবে নামাযের মাধ্যমে আল্লাহ নামাযীর যাবতীয় পাপ মোচন করে
দেন। (বুখারী-মুসলিম)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কিয়ামতের
দিনে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নিবেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল
(সাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের ময়দানে বান্দার সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেয়া হবে,
তা হল নামায। উহা যদি বিশুদ্ধ হয়ে যায়, তবে সে মুক্তি পেয়ে গেল ও সফলকাম
হল। আর উহা যদি বিনষ্ট বা বরবাদ হয়ে যায়, তবে সে ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে
গেল। (তিরমিজী)
নামায যেহেতু এত গুরুত্বপূর্ণ
ইবাদত, তাই এ নামায রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাত অনুযায়ী আদায় করতে হবে। রাসূল
(সাঃ) বলেছেন, তোমরা আমাকে যেভাবে নামায আদায় করতে দেখ, সেভাবে নামায আদায়
কর। (বুখারী)
আমরা এখানে রাসূল (সাঃ) এর নামযের পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
১) নামাযের পূর্বে পরিপূর্ণরূপে অযু করাঃ
বিসমিল্লাহ্ বলে প্রথমে দু‘হাত
কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করার পর মুখে ও নাকে তিনবার পানি দিয়ে কুলি করবে ও
নাক ঝাড়বে। অতঃপর মুখমন্ডল ধৌত করবে (কপালের উপর চুল গজানোর স্থান থেকে
নিয়ে দাড়ির নিম্নভাগ, এবং এক কান থেকে নিয়ে অপর কান পর্যন্ত)। এরপর
দু’হাতের আঙ্গুলের শুরু থেকে কনুই পর্যন্ত তিন বার ধৌত করবে। প্রথমে ডান
হাত অতঃপর বাম হাত।
আবার নতুন করে দু’হাত পানি দিয়ে
ভিজিয়ে তা দ্বারা মাথা মাসেহ্ করবে। দু‘হাত মাথার অগ্রভাগ থেকে নিয়ে পিছন
দিকে ফিরাবে। তারপর দু‘কান মাসেহ্ করবে। দু‘হাতের দুই তর্জনী কানের ভিতরের
অংশ এবং দু‘বৃদ্ধাঙ্গলী দিয়ে বাহিরের অংশ মাসেহ্ করবে।এর পর গর্দান মসেহ
করবে। (যারা বলে গর্দান মসেহ হাদীসে নেই এরা মুর্খ) এর জন্য নতুনভাবে পানি
নেয়ার দরকার নেই। অতঃপর দু‘পা টাখনুসহ তিনবার ধৌত করবে।
২) নামাযের নিয়ত করাঃ
নামায শুরুর আগে নির্দিষ্ট
নামাযের জন্য নিয়ত করা প্রত্যেক নামাযীর উপর আবশ্যক। নিয়তের স্থান হল
অন্তর। মুখে উচ্চারণের মাধ্যমে নিয়ত করার প্রয়োজন নেই। কেউ যদি মুখে
নিয়তের শব্দগুলো বলে তাতে সমস্যও নেই। (যারা বলে মুখে নিয়ত করা বিদআত তারা
সবচেয়ে বড় বিদআতী, ফিতনাবাজ)
৩) কিবলামুখী হয়ে আল্লাহু আকবার বলে দাঁড়ানোঃ
রাসূল (সাঃ) যখনই নামাযে
দাঁড়াতেন, কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন। তিনি বলেছেন, যখন তুমি নামাযে
দাঁড়াবে, তখন পরিপূর্ণরূপে অযু করবে, অতঃপর কিবলামুখী হয়ে আল্লাহ আকবার
বলবে।
৪) নাভির নিচে হাত রাখাঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নামাযে
দাঁড়ানো অবস্থায় ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে নাভির নিচে স্থাপন করতেন। (আবু
দাউদ-নাসাঈ) নাভির নিচে হাত রাখাটাই ছহীহ হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত। এছাড়া
অন্য কোথাও রাখার হাদীছ বিশেষ করে বুকের উপর হাত রাখার হাদীস দুর্বল।
৫) ছানা পাঠ করাঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে ছানা
পাঠের বিভিন্ন বাক্য প্রমাণিত আছে। সাধারণ পাঠকদের সুবিধার্থে সবচেয়ে
সংক্ষিপ্ত এবং সহজ দু‘আটি এখানে উল্লেখ করা হল। (سُبْحَانَكَ اَلَلهُمَّ
وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَك اَسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ
غَيْرُكَ) উচ্চারণঃ “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা
ওয়াতাবারাকাস্মুকা ওয়া তা‘লা যাদ্দুকা ওয়া লাইলাহা গাইরুকা” অর্থঃ “হে
আল্লাহ! আমি তোমার প্রশংসা জড়িত পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি, তোমার নাম বরকতময়,
তোমার মহানত্ব সমুন্নত। আর তুমি ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নাই”।
৬) সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখাঃ
নবী (সাঃ) নামায অবস্থায় মাথা সোজা রেখে যমীনের দিকে দৃষ্টি রাখতেন। তাঁর দৃষ্টি সিজদার স্থান অতিক্রম করতো না।
৭) কিরাত পাঠ করাঃ
কিরা‘ত পাঠ করার পূর্বে রাসূল
(সাঃ) নীরবে(أعُوْذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ) উচ্চারণঃ
“আউজু বিল্লাহি মিনাশ্শায়ত্বানির রাযীম” এবং (بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ
الرَّحِيْمِ) উচ্চারণঃ “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম” পাঠ করতেন। অতঃপর
সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। সূরা ফাতিহা পাঠ করা নামাযের রুকন। সূরা ফাতিহা
ছাড়া নামায হবেনা।
৮) মুক্তাদীর জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ জরুরী নয় :
ইমামের পিছনে মুক্তাদীগণ সূরা
ফাতিহা পাঠ করবে না। কারণ, কুরআনের বানী “কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা হলে
তোমরা চুপ থাক। রাসূল (সাঃ) এর বাণী “ইমামের কিরআতই মুক্তাদির কেরাত।”
(মুসলিম) সুতরাং মুক্তাদীগণ সূরা ফাতেহা পাঠ করবে না। এখানে একটা কথা বলা
প্রয়োজন। হাদীসের কোথাও একথা নেই যে, মুক্তাদীদের সূরা ফাতেহা পড়তে হবে।
হাদীসে আছে সুরা ফাতেহা ছাড়া নামায হয় না। এটি একাকি নামায আদাকারী ও
ইমামের জন্য খাস।
৯) সূরা ফাতিহা শেষে মুক্তাদীগণ সবাই নিঃশব্দে আমীন বলবেঃ
রাসূল (রাঃ) যখন সূরা ফাতিহা পাঠ শেষ করতেন, তখন অনুচ্চ স্বরে আমীন বলতেন। (তিরমিযী, আহমদ, হাকেম)
১০) নামাযের প্রথম দু’রাকাতে সূরায়ে ফাতেহার পর অন্য সূরা মিলানো। (একাকী নামায আদায়কারী ও ইমাম)
১১) রুকূ করা প্রসঙ্গঃ
কিরা‘আত পাঠ শেষে রাসূল (সাঃ)
আল্লাহ আকবার (اَللَّهُ اَكْبَرُ) বলে রুকূতে যেতন। (বুখারী) রুকুতে স্বীয়
হাঁটুদ্বয়ের উপর হস-দ্বয় রাখতেন এবং তিনি এজন্য নির্দেশ দিতেন। (বুখারী)
তিনি কনুই দু‘টোকে পাঁজর দেশ থেকে দূরে রাখতেন। তিনি রুকু অবস্থায় পিঠকে
সমান করে প্রসারিত করতেন। এমন সমান করতেন যে, তাতে পানি ঢেলে দিলেও তা যেন
সি’র থাকে। (বুখারী, তিরমিজী, তাবরানী) তিনি নামাযে ত্রুটিকারীকে বলেছিলেন,
অতঃপর যখন রুকূ করবে, তখন স্বীয় হস্তদ্বয় হাটুদ্বয়ের উপর রাখবে এবং পিঠকে
প্রসারিত করে স্থিরভাবে রুকূ করবে। (আহমাদ) তিনি পিঠ অপেক্ষা মাথা উঁচু বা
নীচু রাখতেন না। বরং তা মাঝামাঝি থাকত। (বুখারী, আবু দাউদ)
রুকুর দু‘আঃ রুকুতে রাসূল (সাঃ)
এই দূ‘আ পাঠ করতেন سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ)) উচ্চারণঃ ‘সুবহানা
রাব্বীয়াল আযীম’। অর্থঃ আমি মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি। এই
দূ‘আটি তিনি তিনবার বলতেন। কখনও তিনবারের বেশীও পাঠ করতেন। (আহমাদ)
১২) রুকূ থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোঃ
অতঃপর রাসূল (সাঃ) রুকূ হতে সোজা
হয়ে দাঁড়াতেন। তিনি এই দূ‘আ বলতে বলতে রুকূ হতে মাথা উঠাতেন, ( سَمِعَ
اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ) উচ্চারণঃ সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। অর্থঃ যে
ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে, আল্লাহ তার কথা শ্রবন করেন। (বুখারী-মুসলিম)
তিনি যখন রুকূ হতে মাথা উঠাতেন, তখন এমনভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন যে,
মেরুদন্ডের হাড়গুলো স্ব-স্ব স্থানে ফিরে যেত। অতঃপর তিনি দাঁড়ানো অবস্থায়
বলতেন, رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ)) উচ্চারণঃ রাব্বানা লাকাল হাম্দ। হে আমার
প্রতিপালক! সকল প্রশংসা তোমার জন্য।
১৩) নামাযে রফউল ইয়াদাইন না করাঃ
রাফউল ইয়াদাইন অর্থ উভয় হাত
উঠানো। নবী (সা.) এর নামাযে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অন্য কোথাও রফউল ইয়াদাইন
নেই। (মর্মার্থ) (তিরমিযী, নাসায়ী)
১৪) সাজদাহ প্রসঙ্গঃ
অতঃপর রাসূল (সাঃ) আল্লাহ আকবার
বলে সাজদায় যেতেন। তিনি বলেছেন, কারও নামায ততক্ষন পর্যন্ত পূর্ণ হবেনা,
যতক্ষন না সে সামিআল্লাহ হুলিমান হামিদাহ বলে সোজা হয়ে দাঁড়াবে অথঃপর
আল্লাহ আকবার বলবে, অতঃপর এমনভাবে সাজদাহ করবে যে, তার শরীরের জোড়াগুলো
সুসি’রভাবে অবস্থান নেয়। সাজদাহ অবস্থায় পার্শ্বদ্বয় থেকে হস’দ্বয় দূরে
রাখতেন। (বুখারী, আবু দাউদ)
নবী (সাঃ) রুকূ-সাজদাহ পূর্ণাঙ্গরূপে ধীরসি’রভাবে আদায় করার নির্দেশ দিতেন।
সাজদার দূ‘আঃ সাজদাহ অবস্থায়
তিনি এই দূ‘আ পাঠ করতেন, (سُبْحَانَ رَبِّيَ الاَعْلَى) উচ্চারণঃ “সুবহানা
রাব্বীয়াল আ‘লা”। অর্থঃ ‘আমি আমার সুউচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা
করছি’। তিনি এই দূ‘আটি তিনবার পাঠ করতেন। অতঃপর নবী (সাঃ) আল্লাহ আকবার বলে
সাজদাহ থেকে মাথা উঠাতেন। তিনি বলেছেন, কোন ব্যক্তির নামায ততক্ষন পর্যন্ত
পূর্ণ হবেনা, যতক্ষন না এমনভাবে সাজদাহ করবে যে, তার দেহের প্রত্যেকটি
জোড়া সুস্থিরভাবে অবস্থান নেয়।
দুই সাজদার মাঝখানে বসাঃ প্রথম
সাজদাহ ও সাজদার তাসবীহ পাঠ করার পর ‘আল্লাহ আকবার’ বলে স্বীয় মস্তক উত্তলন
করতেন। দুই সাজদার মাঝখানে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা ওয়াজিব। নবী (সাঃ) দুই
সাজদার মধ্যবতী অবস্থায় এমনভাবে স্থিরতা অবলম্ভন করতেন, যার ফলে প্রত্যেক
হাড় স্ব স্ব স্থানে ফিরে যেত। (আবু দাউদ)
দুই সাজদার মাঝখানে দূ‘আঃ দুই
সাজদার মধ্যখানে নবী (সাঃ) এই দূ‘আ পাঠ করতেন,(اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِىْ وَ
ارْحَمْنِى وَ اهْدِنِىْ وَ عَافِنِىْ وارْزُقْنِىْ) উচ্চারণঃ
‘আল্লাহুম্মাগফিরলী, ওয়ার হামনী, ওয়াহ্দিনী, ওয়া আফিনী ওয়ারযুকনী’ অর্থঃ
“হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর, দয়া কর, হিদায়াত দান কর, মর্যাদা বৃদ্ধি
কর এবং জীবিকা দান কর”। এই দূ‘আ পাঠ করে নবী (সাঃ) আল্লাহ আকবার বলে
দ্বিতীয় সাজদায় যেতেন এবং প্রথম সাজদার মতই দ্বিতীয় সাজদায় তাসবীহ পাঠ
করতেন। অতঃপর আল্লাহ আকবার বলে সাজদাহ থেকে মাথা উঠাতেন (বুখারী) এবং
দ্বিতীয় রাকা‘আতের জন্য সোজা দাড়িয়ে যেতেন। (আবু দাউদ)
১৫) প্রথম তাশা্হহুদঃ
নবী (সাঃ) চার রাকা‘আত বা তিন
রাকা‘আত বিশিষ্ট নামাযের প্রথম দুই রাকা‘আত শেষে তাশাহ্হুদ পাঠের জন্য ডান
পা সোজ করে বাম পায়ের উপর বসতেন।(বুখারী) আরেক হাদীসে আছে নামাযের সুন্নাত
হলো ডান পা সোজ করে বাম পায়ের উপর বসা।(বুখারী) তাশাহহুদের উচ্চারণঃ
আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস্ ছালাওয়াতু ওয়াত্বায়্যিবাতু আস্সালামু আলাইকা
আইয়্যুহান্ নাবিউ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু আস্সালামু আলাইনা
ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু
আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু। এভাবে তাশাহ্হুদ পাঠ করার পর
আল্লাহ আকবার বলে চার বা তিন রাকা‘আত বিশিষ্ট নামাযের বাকী নামাযের জন্য
দাঁড়াবে। বাকী নামায পূর্বের নিয়মে সমাপ্ত করবে।
১৬) শেষ বৈঠক ও সালাম ফেরানোঃ
তাশাহ্হুদ পাঠের জন্য শেষ বৈঠকে
বসা ওয়াজিব। বসার নিয়ম হলো ডান পা খাড়া রেখে বাম পায়ের উপর বসা। এভাবে বসে
প্রথমে আত্যাহিয়াতু পাঠ শেষে রাসূল (সাঃ) এর উপর (দরূদ) সালাত পাঠ করতে
হবে।
দরূদের উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা
সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা
ইবরাহীমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদু ম্মাযীদ। আল্লাহুম্মা বারিক
আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা ওয়া
আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদু ম্মাযীদ। দরূদ পাঠ শেষে এই দূ‘আ পাঠ করতে
হবে, উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসী জুলমান কাছীরাও ওয়ালা
ইয়াগফিরুজ্ জুনুবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা ওয়ারহামনী
ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর্ রাহীম। (বুখারী) অতঃপর প্রথমে ডান দিকে পরে বাম
দিকে সালাম ফিরিয়ে নামায সমাধা করবে।
হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে বিশুদ্ধভাবে নামায আদায়ের তাউফিক দিন। আমীন
মাওলানা আবু রায়হান
২য় আলোচনা
আসাদুল্লাহ গালিব
সালাত
সালাত এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দোয়া,রহমত,ক্ষমা প্রাথর্না করা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, ‘ শরীয়তের নির্দেশিত নিয়মে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার পদ্ধতির নাম “সালাত”।সালাত ‘তকবীরে তাহরীমা’ দিয়ে শুরু হয় আর ‘সালাম’ দিয়ে শেষ হয়।
ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী দৈনিক ৫ বার সালাত আদায় করতে হয়।ফজর, যোহর,আসর,মাগরিব,এশা।
সালাতের গুরুত্ব
- মু’মিন ও অমুসলিমের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে ‘সালাত’।
- কোন মানুষ কলেমা পাঠ করার পরই,প্রথম কাজ হচ্ছে ‘সালাত’ আদায় করা।
- প্রতিদিন ৫ বার ‘সালাত’ পালনের নির্দেশ আছে,যেটা অন্য কোন ইবাদতে নাই।
- মাত্র ৭ বছর বয়স হলেই এটা শুরু করতে হয়্।
- পৃথিবীতে থেকে ‘সালাত’ উঠে যাবার পরই কিয়ামত হবে।
- কিয়ামতের দিন প্রথম হিসাব নেয়া হবে, ‘সালাতে’র।
- সালাত ছাড়া ইসলাম টিকে থাকতে পারেনা।
ফযরের সালাত
সূর্য উঠার আগে ২ রাকাত সুন্নত ও ২ রাকাত ফরয।
যোহরের সালাত
দুপুরে ৪ রাকাত সুন্নত,৪ রাকাত ফরয, ২ রাকাত নফল।
আসরের সালাত
বিকালে ৪ রাকাত সুন্নত ও ৪ রাকাত ফরয।
মাগরেবের সালাত
৩ রাকাত ফরয ও ২ রাকাত সুন্নত।
এশার সালাত
৪ রাকাত ফরয, ২ রাকাত সুন্নত ও ৩ রাকাত বিতর।
সমস্ত ওয়াক্তের জন্য সাধারন নিয়ম
১. ওযূ করার পর ছালাতের সংকল্প করে ক্বিবলামুখী হতে হবে।
২. ‘আল্লহু আকবর’ বলে দু’হাত কাঁধ বা কানের লতি বরাবর উঠিয়ে বাম হাতের উপর ডান হাত ধরতে হবে।
৩. সালাতের প্রায় পুরোটা সময় সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখতে হবে।
৪. হাত বুকে বাধা, নাভীতে বাধা, নাভির উপরে বাধা – সবই হাদীসে আছে।
৫. সানা পড়তে হবে। আমাদের মাঝে প্রচলিত:
{ সুব’হানাকা আল্লহুম্মা ওয়া বি’হাম্-দিকা ওয়া তাবা-র-কাস্-মুকা ওয়া তা’আলা জ্বাদ্দুকা ওয়া লা~~ ইলাহা গ্বইরুক }
অর্থ: হে আল্লহ্, তুমি পাক ও পবিত্র! তুমিই প্রশংসার উপযুক্ত, তুমি বরকত দানকারী এবং মহান, তোমার নাম ও মর্যাদা বহু উচ্চে। তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই।
৬. আ‘ঊযুবিল্লাহ পাঠ করতে হবে। প্রতি রাকাতে বিসমিল্লাহ-সহ সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। এরপর বিসমিল্লাহ-সহ (প্রথম দুই রাকাতে) অন্য কোন সূরা পড়তে করবে। ধীরস্থিরতা বজায় রাখতে হবে।
৭. ‘আল্লহু আকবর’ বলে রুকু করতে হবে। রুকুতে পিঠ সম্পূর্ণ সোজা রাখার চেষ্টা করতে হবে। রুকূর দুআ (প্রচলিত): الْعَظِيْمِ رَبِّيَسُبْحَانَ {সুব’হানা রব্বীয়াল ‘আযীম} (মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি মহান) কমপক্ষে তিনবার পড়তে হবে।
৮. রুকূ থেকে উঠে সোজা ও সুস্থিরভাবে দাঁড়াবেন। দুআ: حَمِدَهُ لِمَنْ اللهُ سَمِعَ { সামি‘আল্লহু লিমান্ ‘হামিদাহ্ } (আল্লাহ শোনেন তার কথা, যে তাঁর প্রশংসা করে)। অতঃপর বলবেন:
الْحَمْدُ لَكَ رَبَّنَا { রব্বানা লাকাল্ ‘হামদ্ } (হে আল্লাহ, হে আমাদের প্রভু! আপনার জন্যই যাবতীয় প্রশংসা)।
৯. ‘আল্লহু আকবর’ বলে সিজদা করতে হবে। সিজদায় যাতে হাত মাটিতে বিছিয়ে দেয়া না হয়। সিজদার দুআ (প্রচলিত): الْأَعْلَى رَبِّيَسُبْحَانَ {সুব’হানা রব্বীয়াল ‘আলা} (মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি সর্বোচ্চ) কমপক্ষে তিনবার পড়তে হবে।
১০. প্রথম সিজদার পর কিছুক্ষণ বসতে হয় দ্বিতীয় সিজদার আগে। এসময় যিকর: কমপক্ষে ২ বার { রব্বিগ্-ফির্-লী } (হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর)। এরপর দ্বিতীয় সিজদা করতে হবে।
১১. সালাত এক রাকাতের হলে দ্বিতীয় সিজদার পরই আত্তা’হিয়্যাতু ও দরূদে ইবরহীম পড়তে হবে। দু’আ মাসূরা ও অন্য দু’আও পড়তে পারেন। সালাত দুই রাকাতের হলে দ্বিতীয় রাকাতের শেষে এগুলো পড়বেন। তিন রাকাতের হলে দ্বিতীয় রাকাতের শেষে আত্তা’হিয়্যাতু পড়ে আবার দাড়িয়ে সূরা পাঠসহ ওই রাকাতের বাকি কাজগুলো করে শেষের দিকে বসে আত্তা’হিয়্যাতু-সহ বাকিগুলো পড়বেন। একইভাবে, সালাত চার রাকাতের হলে দ্বিতীয় রাকাতের শেষে আত্তা’হিয়্যাতু পড়ে আবার দাড়িয়ে বাকি দুই রাকাত পড়ে চতুর্থ রাকাতের শেষে আত্তা’হিয়্যাতু-সহ বাকিগুলো পড়বেন।
১২. আত্তা’হিয়্যাতু: আত্তাহিইয়া-তু লিল্লা-হি ওয়াছ্ ছালাওয়া-তু ওয়াত্ ত্বাইয়িবা-তু আসসালা-মু ‘আলায়কা আইয়ুহান নাবিইয়ু ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু। আসসালা-মু ‘আলায়না ওয়া ‘আলা ‘ইবা-দিল্লা-হিছ ছা-লেহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আনণা মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহু ।
অর্থ: যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয় পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সমৃদ্ধি সমূহ নাযিল হউক। শান্তি বর্ষিত হউক আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের উপরে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল’
১৩. দরূদে ইবরহীম: আল্লা-হুম্মা ছাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লায়তা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইব্রা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিঁউ ওয়া ‘আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা বা-রক্তা ‘আলা ইব্রা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লে ইব্রা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ ।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত’।
১৪. দু’আ মাসূরা: আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফ্সী যুলমান কাছীরাঁও অলা ইয়াগ্ফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্তা, ফাগ্ফিরলী মাগফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ারহাম্নী ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রহীম’ ।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের উপরে অসংখ্য যুলুম করেছি। ঐসব গুনাহ মাফ করার কেউ নেই আপনি ব্যতীত। অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ হ’তে বিশেষভাবে ক্ষমা করুন এবং আমার উপরে অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’।
১৫. সর্বশেষে, প্রথমে ডানে ও পরে বামে ‘আসসালামু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ (আল্লাহর পক্ষ হ’তে আপনার উপর শান্তি ও অনুগ্রহ বর্ষিত হোক) বলে সালাম ফিরাবে।
নামাযের শ্রেনী-বিভাগ
ফরয
সকালে ২ রাকাত ফরয নামায আছে। ফরয নামায অবশ্যই পড়তে হবে। না পড়লে গুনাহ হবে। ফরয নামায ২ বার পড়া যায়।
ওয়াজিব
দুই ঈদের নামায হচ্ছে ওয়াযিব। ইচ্ছাকৃত ও নিয়মিত না পড়লে গুনাহ হবে।
সুন্নত
সুন্নতে মুয়াক্কাদা ও সুন্নতে
বিতির
বিতর মূলত: সারাদিনেরনামাযের পরিসমাপ্তি। সেদিক থেকে এটা গুরুত্বপূর্ন। বিতর নামায ২ বার পড়া যায় না।
নফল
পড়লে সোয়াব হবে।তবে হাশরের মাঠে যদি ফরয নামায প্রয়োজনের থেকে কম থাকে, তাহলে মহান আল্লাহ ফরযের পরে ওয়াযিব,নফল ইত্যাদি থেকে নিয়ে সেই মানুষকে উদ্ধারের চেষ্টা করবেন। কাজেই আপাত দৃষ্টিতে এটা খুব একটা জরুরী মনে না হলেও আসলে অত্যন্ত জরুরী। এই নফল নামাজই মানুষের জন্য বেহেশত-দোযখের সিদ্ধান্তকারী হয়ে যেতে পারে।
অন্যান্য সালাত
তারাবী
সাধারন নফল নামাযের মত দুই দুই রাকাত করে, পড়তে হয়।আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে ২০ রাকাত তারাবী পড়ানো হয়।
দুই ঈদের নামায
৬ তকবীরের সাথে দুই ঈদের সালাত পড়ানো হয়।
তাহাজ্জুদ
সাধারন নফল নামাজের ম দুই দুই রাকাত করে মোট ১২ রাকাত , ফজর নামাজের আগে পড়তে হয়।